Quantcast
Channel: Eisamay
Viewing all articles
Browse latest Browse all 1736

২০০ বছরের পুরনো কাশ্মীরি দোকানে 'হরিসা' কিনতে আজও লাইন পড়ে!

$
0
0

Harissa: গত কয়েক দিন তেল ঝাল মশলা খেয়ে পেটের অবস্থা খুব খারাপ। বাথরুম আসা যাওয়া লেগেই আছে। পেটটাকে একটু আরাম দিতে হবে। তাহলে উপায়? পাতলা ডাল, আলু সিদ্ধ ভাতে চটকে কদিন খেতে হবে। চিকেন স্টু দিয়ে ভাত চ'কে খেলেও পেট ভালো থাকবে। শরীরটাও একটু সুস্থ হবে। এই চটকে মাখা ভাত বাঙালি বাড়ির একরকম পথ্যি।

কিন্তু এই চটকে মাখা ভাত মাংস খেতেই কাশ্মীরের একটি দোকানে ২০০ বছর ধরে লাইন পড়ে। আবাক হওয়ার কিছু নেই। একদম সত্যিই কথা। তাহলে আজ সেই চটকানো ভাত মাংসের কথাই বলি। ভেড়া বা বিফের মাংস, ভাত, মৌরি, মেথি, তেল ইত্যাদির মিশ্রণে একটি অভিনব খাবার তৈরি করেন কাশ্মীরীরা। তার পোশাকি নাম হরিসা (Harissa) । আর এই হরিসার জন্য কাশ্মীরের সবচেয়ে বিখ্যাত দোকান হল 'দ্য হরিসা' ভোজনালয়। এই দোকানে হরিসা কিনতে গেলে লম্বা লাইনের পিছনে দাঁড়াতে হয়।

শীত পড়লে আমাদের এখানে যেমন পিঠে, পুলি, নলেন গুড়ের পায়েস মিষ্টি, কড়াইশুঁটির কচুরি, ছোটো নতুন আলুর দম খাওয়ার জন্য প্রাণ আনচান করে ওঠে, তেমনই কাশ্মীরের মানুষদের প্রাণ আনচান করে ওঠে ঝাল ঝাল হরিসা খাওয়ার জন্য। এটি সেখানকার ঐতিহ্যবাহী খাবার। কাশ্মীরের অনেক জায়গাতেই এই হরিসা (Harissa) তৈরি হয়। কাশ্মীরিদের বাড়িতেই এটি তৈরি হয়। কিন্তু মরশুমের মধ্যে একবার হলেও কাশ্মীরীরা 'দ্য হরিসা'র জিভে জল আনা বিখ্যাত হরিসা (Harissa) খেয়ে মন এবং পেট ভরিয়ে নেন। তবে সেটা একবার থেক দুই, তিন, চার পাঁচ আরও অনেকবারও হয়ে যায়।

89642882


নকুড়ের সন্দেশ, ভীম নাগের দই, শ্রীহরির হিঙের কচুরি-ছোলার ডাল, অনাদির মোগলাই, সূর্য মোদকের যেমন জলভরা সন্দেশ- তেমনই হল কাশ্মীর উপত্যকার শ্রীনগরের 'দ্য হরিসা'র বিখ্যাত হরিসা। এই দোকানের বয়স ২০০ বছর পেরিয়েছে।
হরিসা (Harissa) ভোজনালয়। শ্রীনগরের ঐতিহ্যবাহী এক খাবারের দোকান। বর্তমানে এই দোকানের মালিক গুলাম মহম্মদের বয়স আশি পেরিয়ে গেছে। বাবার কাছ থেকে কাজ শিখে এখন দোকান সামলাচ্ছেন তাঁর ৪৫ বছরের ছেলে জোহর আহমেদ ভাট।

শীতে কাঁপতে কাঁপতে সকাল সাতটার সময় বাবা-ছেলে যখন তাঁদের হিমালয়ের কোলে থাকা এই দোকানের দরজা খোলেন তখনই তার বাইরে লম্বা লাইন। লাইনে আট থেকে আশি সব বয়সের ক্রেতার দেখা মেলে। গত ৬০ বছর ধরে এই চিত্রের কোনও পরিবর্তন দেখেননি বৃদ্ধ গুলাম মহম্মদ। তিনি ব্যবসায় বসেন বাবার হাত ধরে। তখন তিনি সদ্য যুবক। বাবা তাঁকে হাতে ধরে সবকিছু শিখিয়েছিলেন। তাঁকে শিখিয়েছিলেন তাঁর বাবা। গুলাম মহম্মদও নিজের ছেলেকে সবকিছু শিখিয়েছেন। বংশানুক্রমে এভাবেই চলছে প্রায় দুইশো বছর ধরে। গুলাম মহম্মদই আগে সবকিছুর তদারকি করতেন। এখন সেসব কাজ ছেলে করে। আর তিনি দোকানের এক কোণে হাসি হাসি মুখ করে বসে থেকে ক্রেতাদের স্বাগত জানান।

দিন দিন তাঁদের দোকানের হরিসার (Harissa) চাহিদা এতটাই বেড়ে চলেছে যে লোকে আগে থেকে বুক করে রাখেন। তারপরেও দোকানের বাইরে লম্বা লাইন লাগে। তবে মূলত ঠান্ডার সময়ই বিক্রি থাকে। কাশ্মীরের তাপমাত্রা যখন শূন্যর নীচে নামে তখনই হরিসার পিক সিজন। অনেক দূর দূর থেকেও ক্রেতারা হরিসা কিনতে আসেন। গুলাম মহম্মদের দোকানে আম জনতারা যেমন খাবার কেনেন, তেমনই এখানকার হরিসার ভক্ত বড় বড় নামজাদা লোকেরাও। রাজনীতিবিদ থেকে বলিউড তারকা সকলেই এই হরিসা দারুণ পছন্দ করেন। স্থানীয় রাজনীতিবিদদের বাড়িতে তাঁর তৈরি হরিসা যায় নিয়মিত। জানান জোহর আহমেদ ভাট। তাঁদের দোকানের হরিসা নাকি খেয়েছেন সৌদি আরবের রাজা সলমান বিন আবদুল্লাজিদ আল সৌদ। তাঁর বাবার আমলে দোকানে এসে হরিসা খেয়েছেন দীলিপ কুমার স্বয়ং।

89478032


হরিসা একটি মন ভালো করা খাবার। শুধু স্বাদেই নয় খাবারটি বেজায় পুষ্টিকরও। এটি খেতে হয় গরম গরম। লাচ্ছা পরোটা বা পেঁয়াজের পরোটার সঙ্গে এটি খেতে অসাধারণ লাগে। বরফ জমা ঠান্ডাতেই এই পদটি রান্নার জন্য উপযুক্ত। হরিসার উপর অল্প কেশর ছড়িয়ে, কাবাব, মেথি এবং তেল সহযোগে এটি খেতে হয়। হরিসা রান্নার পদ্ধতিটি বেশ অভিনব এবং অবশ্যই সময় সাপেক্ষ। দ্য হরিসা-তে রান্নার তোরজোর শুরু হয় আগের দিন দুপুর দুটো থেকে। রান্না শেষ হয় বিকেল পাঁচটায়। সেই হরিসাই পরদিন ভোর থেকে বিক্রি করতে শুরু করেন তাঁরা।

প্রথমে ভেড়ার মাংস কেটে পরিষ্কার করে মাটির পাত্রে অল্প আঁচে সিদ্ধ করতে দেওয়া হয়। এতে অনেক্ষণ সময় লাগে। যতক্ষণ না হাড় থেকে মাংস খুলে বেরিয়ে যায় ততক্ষণ এই প্রক্রিয়া চলে। এই মাংস সিদ্ধ করাটাই নাকি হরিসার তৈরির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক। এর জন্য অনেক দক্ষতা লাগে। মাংসে যদি একটুকরো হাড়ও থেকে যায় তাহলে হরিসার সমস্ত স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়।
অন্য একটি পাত্রে হাড় ছাড়ানো সিদ্ধ নরম মাংসের সঙ্গে চাল সিদ্ধ করা হয়। তাতে মেশানো হয় লবঙ্গ, এলাচ, দারচিনি এবং অনেকটা মৌরি। খুব ভালো করে মেশানো হয় সেটি। ভালো করে সবকিছু সিদ্ধ হয়ে গেলে সমস্ত মিশ্রণ একটি তামার হাঁড়িতে ঢালা হয়। এবার সমস্ত জিনিসটি কাঠের তৈরি হামান দিস্তা দিয়ে থেঁতো করা হয়। পুরো জিনিসটি একেবারে মিহি করে থেঁতো করে নিতে হয়। গোটা পদ্ধতিটিই খুব কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ। অভ্যাস না থাকলে হরিসা রান্না করা খুব কঠিন।

89180516


দুইশো বছর পুরোনো এই দোকানে প্রতিদিন প্রায় ৫০ কেজি হরিসা বিক্রি হয়। দাম কেজি প্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। পাঁচ হাঁড়ি হরিসার সঙ্গে প্রতিদিন ছোটো ছোটো হাঁড়িতে তৈরি থাকে যথাক্রমে মেথি মাস, কাবাব এবং গরম তেল। তামার প্লেটে করে হরিসা পরিবেশ করা হয়। উপরে ছড়িয়ে দেওয়া হয় কেশর। সঙ্গে থাকে মেথি মাস, কাবাব এবং গরম তেল। দোকানের বাইরে কনকনে ঠান্ডায় বসে সেই খাবার গরম গরম খাওয়া এবং সঙ্গে কাশ্মীরী মধুর সংগীতের কম্বিনেশনের কোনও তুলনা হয় না।


Viewing all articles
Browse latest Browse all 1736


<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>